বসে বসে কলা খাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি মন্তব্য করে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ বলেছেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। তারা সুযোগ খুঁজছেন সত্যের পক্ষে থাকার জন্য। জনগণের পক্ষে কাজ করার জন্য। সরকারের পক্ষে কাজ না করে নিরপেক্ষ হওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি গতকাল এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। একই সভায় ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যখন বেনজির ও আসাদুজ্জামান মিয়ারা যোগাযোগ শুরু করেছে তখন ভয়ে সরকারের হাঁটু কাঁপা শুরু হয়েছে। আর মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার পরাজয়বরণ করতে বাধ্য হবে।
গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই আলোচন সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। ‘৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ও আজকের বাংলাদেশ, আসন্ন নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা ও করণীয়’ শীর্ষক সভায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রমুখ। এ ছাড়াও বহু মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ আমরা বসে বসে কলা খাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। বিএনপিকে বলেছি- জোটের প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে বানরের পিঠা ভাগ করার মতো করবেন না। যোগ্য প্রার্থীদের অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন। ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। আমার দলেও ৪৬ জন প্রার্থী ছিল। কিন্তু আমি তাদের বলেছি যোগ্য প্রার্থীই কেবল নমিনেশন পাবেন। বিএনপির পিঠে সওয়ার হয়ে এমপি হওয়ার সুযোগ নেই। যারা নমিনেশন পাবেন তাদের অবশ্যই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু দেশের ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধ।
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অলি আহমদ বলেন, আমি আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি পুলিশ ও প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা এতদিন সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন তারা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না। আমরা ক্ষমতায় এলে তাদের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। একই সাথে শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পরাধীন থাকতে হয়। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় এলে এই সরকারি কর্মকর্তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেবো।
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি নিয়মিত ডিসকভারি দেখি। ছোট একটা বাঘ তার চেয়ে ১০গুণ বড় একটি হাতিকে ফেলে দেয়। এটি থেকে বুঝতে হবে আপনাদের কী করা উচিত। করণীয় একটাই। সেটা হলো প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় যান। মা-বোনদের বোঝান। তারা বের হয়ে এসে ভোট দিলেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।
মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, আসন্ন নির্বাচন হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও পুলিশের মধ্যে। আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে না। আমরা অনেক ছাড় দিয়েছি। পুলিশ ও আওয়ামী গুণ্ডাবাহিনীর জন্য বাড়িতে থাকতে পারি না। নিজের এলাকায় যেতে পারি না। নেত্রীকে জেলে রেখে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আর নয়। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে বলব-আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে দেশকে আর ধ্বংস করবেন না। আমরা মুক্তি চাই। কোনো দেশের কাছে আমরা পরাধীন থাকতে চাই না। পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন, সেখানে গণতন্ত্র না থাকায় দেশটার কি অবস্থা হয়েছে। আমাদেরও তাই হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাকে রাস্তায় নামতে দেবে না। পুলিশ আছে। এসব ম্যানমেনে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। বাতাস অন্য দিকে বইছে দেখছেন না? ঢাকার মিটিং, রাজশাহীর মিটিংয়ে দেখেননি। সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তারপরও মানুষ পায়ে হেঁটে সমাবেশে চলে এসেছে। ভাসানীর ডাকে মানুষ যেভাবে আসত এখনো সেভাবে মানুষ আসছে। যাদেরকে ভয় করেন, সেই বেনজির ও আসাদুজ্জামান মিয়ারা যোগাযোগ শুরু করেছে। তারা কোন পথে যাবে সেটির জন্য যোগাযোগ করছে। এখন ভয়ে সরকারের হাঁটু কাঁপা শুরু হয়েছে। বুঝতে পারছে তাদের ভিত নড়ে গেছে। এরপরও যারা এই সরকার ও প্রশাসনকে ভয় পান তাদের দিয়ে কিছু হবে না। কারণ ডাক্তারি ভাষায় একটা কথা আছেÑ ভয়ের কোনো চিকিৎসা নেই।
প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ভারত থাকবে না -মান্না : নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা চেয়েছিলাম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির পর নির্বাচনে যাব। কিন্তু এখন কি বলতে পারব আমরা নির্বাচন করব না? সরকার তো সেটিই চায়। তারা জানে নির্বাচনে লড়াই হলে জিততে পারবে না। ফলে সরকার যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আর আমরা যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসতে চাই। সরকার কিন্তু মারাত্মক ধান্দাবাজ। তারা বলছে- আসন্ন নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক আসতে পারবে; কিন্তু তারা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবে। কোনো রিপোর্ট তারা বাইরে পাঠাতে পারবে না। কিন্তু বুঝতে হবে আসন্ন নির্বাচন অনেক কঠিন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে ফোরটুয়েন্টি মার্কা নিবাচন হয়েছিল, তাতে যে ভারত সবচেয়ে বেশি সমর্থন করেছিল তারাই এবার বলছে বাংলাদেশের আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের সাথে ভারত থাকবে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার জন্য যে ২১ দিন সুযোগ পাব। তখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশ চষে বেড়াব। আর জেলা পর্যায়ের নেতারা শুধু মানুষকে বোঝাবেন। ১৫ তারিখের পর কোনো বিরোধী নেতাকে গ্রেফতার করা হবে না সরকার বললেও এখনো গায়েবি মামলা দিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে জনগণের মধ্যে এই সরকারের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ জমেছে। সামনে আমরা এমন কৌশল নেবো। এমন লড়াই করব। যে সরকার পরাজয়বরণ করতে বাধ্য হবে। খালেদা জিয়াকেও মুক্ত করব। নির্বাচন কমিশনকে সরকারের দালাল আখ্যা দেন তিনি।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, সরকার রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের মারজিনালাইজ করে ফেলেছে। কারণ তারা নিজেরা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি আওয়ামী লীগ নামক পুকুরে ডুবন্ত অবস্থায় আছেন। একটু শক্তি ব্যবহার করলেই আপনি শেষ। আমরা নির্বাচনমুখী আছি। নির্বাচনমুখী থাকতে চাই।